Polycystic Ovary Syndrome / পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম নামের একটি ডিজিস বা রোগ রয়েছে যার কারণে সময় মত ডিম্বাণু ফোটে না। এই সমস্যার মূলে রয়েছে মেয়েদের জীবন যাত্রা, একটু বেশি বসে পড়া এবং স্থুলতা। সাধারণত প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর এই সমস্যা থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।
তবে প্রাথমিক ধাপে সফলতা না আসলে চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপ প্রয়োগ করতে হবে।ল্যাপরোস্কোপিক ড্রিলিং অথবা ল্যাপরোস্কপিক সিসটেকটমি অথবা হিস্টো স্কপিক এক্সামিনেশন হচ্ছে দ্বিতীয় ধাপের চিকিৎসা।
ল্যাপরোস্কপি বা শল্য চিকিৎসা :
চিকিৎসার এই ধাপে প্রথমে কারণ খুঁজে বের করা হয়। যদি কোন কারন পাওয়া যায়, তবে সে অনুযায়ী চিকিৎসাকরা হয়ে থাকে। কোন ধরনের অপারেশন ছাড়াই পেট না কেটে মাত্র কয়েকটি ফুটো করে সেই ফুটোদিয়ে ছোট ক্যামেরা ও অন্যান্য যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে টিভি পর্দায় দেখে সার্জারি করাকে ল্যাপরোস্কপি সার্জারি বলা হয়।এই পদ্ধতিতে যন্ত্রপাতিপ্রবেশ করিয়ে সরাসরি রোগ নির্ণয় ও অপারেশন করা হয়। যার কারণে অপারেশনের পর রোগী খুব দ্রুত সুস্থ হতে পারে। বন্ধ্যাত্ব এর কিছু কারণ রয়েছে যা সাধারণত আল্ট্রাসাউন্ড করে অথবা অন্যান্য প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়েনা। এই সমস্যা গুলো ল্যাপরোস্কপিতে সরাসরি দৃশ্যমান হয় এবং একই সঙ্গে রোগের চিকিৎসাও সম্ভব। বন্ধ্যাত্বের এমন কিছু কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ল্যাপরোস্কপি করে সাধারণত কয়েক ধরনের বন্ধ্যাত্ব সমস্যা সমাধান করা হয়। যেমনঃ
– টিউব বন্ধ থাকলে (Fallopian Tube) / জরায়ু নালী,
– টিউবে এ প্যাচ থাকলে,
– টিউবে ছিদ্র থাকলে,
– এবং সিষ্ট থাকলে।
নিচে আরো কিছু সমস্যা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
এন্ডোমেট্রিওসিসঃ
এটি বন্ধ্যাত্বের অন্যতম প্রধান কারণ যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে নির্ণিত হয়। এই রোগের কারণে জরায়ু ও এর আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একটি আরেকটির সাথে জোড়া লেগে থাকে এবং স্বাভাবিক অবস্থা নষ্ট করে। রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি এন্ডোমেট্রিওটিক সিস্টেকটমি এবং অ্যাডহেসিওলাইসিস চিকিৎসাও এর মাধ্যমে করা যায়।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS):
এই সমস্যা শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক তারতম্যকে নষ্ট করে, ডিম্বস্ফুটন ব্যাহত করে এবং আক্রান্তরা গর্ভধারণে অসমর্থ হয়। এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ঔষধ বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ডিম্বস্ফুটন করানো হয়। তার পরেও যদি কোন দম্পতি গর্ভধারণে ব্যর্থ হয় তাহলে ল্যাপরোস্কোপি করে রাপচার করা হয়। [Rupture / রাপচার = An ovarian cyst is a fluid filled sac that forms on or inside an ovary. The cyst can break open (Rupture)] এই পদ্ধতিটি ওভারিয়ান ড্রিলিং নামে পরিচিত। ওভারি থেকে হরমোনের অস্বাভাবিক নিঃসরণকে স্বাভাবিক করেও ডিম্বস্ফুটন এর সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।
দক্ষিণ এশিয়াতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে মিনিমাম ১ জনের এই সমস্যাটি দেখা যায়। সমীক্ষায় দেখা যায় প্রতি ৩০ জন নারীর মধ্যে ৩-৫ জনের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকতে পারে।
লক্ষণঃ
– অনিয়মিত পিরিয়ড (যদি টাইম অনেক বেড়ে যায় বা কমে যায়)
– পিরিয়ড ৭-১০ দিন পিছিয়ে যায়,
– পিরিয়ড ১-২ মাস পিছিয়ে যায়,
– ঔষধ না খেলে পিরিয়ড হয় না,
– মাসে ২-৩ বার করে পিরিয়ড হতে পারে,
– পিরিয়ডের সময় প্রচুর ব্যাথা বা ব্লিডিং হয়।
– লোম এর সমস্যা হতে পারে।
– ওজন বেশি হয়ে যাওয়া (পাঁচজনের মধ্যে ৩-৪ জনের হতে পারে) আবার তার মানে এই না যে চিকন হলে এই রোগ হবে না।
– ব্রণ হতে পারে।
– মন খারাপ বা ডিপ্রেশন হতে পারে।
– অনেক সময় কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না, অন্য কোন কারণে আল্ট্রা সাউন্ড করা হলে তখনো ধরা পড়তে পারে যে তার ওভারির মধ্যে সিস্ট রয়েছে।
জরায়ুর টিউমারঃ
জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমারের অবস্থান ল্যাপরোস্কপি করে দেখা যেতে পারে এবং অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে সেঅনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
জন্মগত ত্রুটিঃ
প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে,যা বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় না, ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা ধরা পড়ে।
বন্ধ ফেলোপিয়ান টিউবঃ
বিভিন্ন ইনফেকশন এর কারণে বা জন্মগতভাবে (Fallopian Tube) ফেলপিয়ান টিউব বন্ধ হতে পারে বা থাকতে পারে। ল্যাপেরোস্কোপিক ডাই টেস্ট করে এটা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। তাই এই পরীক্ষা করার আগে অন্যান্য পরীক্ষা করে দেখে নিতে হয় বন্ধ্যাত্বের কারণ হিসেবে আর কোন সমস্যা দায়ী কিনা?
যেমনঃ
ডিম্বস্ফুটনের জন্য হরমোনের কিছু পরীক্ষা করা যায়। ফেলোপিয়ান টিউব ও জরায়ুর ভেতরকার অবস্থা বোঝার জন্য হিস্টারোস্যালফিগ্রাফি করা হয়। সব কিছু স্বাভাবিক থাকার পরেও যদি কোন নারী গর্ভধারণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন অন্য সমস্যা নির্ণয়ের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।