বন্ধ্যাত্বের সার্বিক পরিস্থিতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, সারা বিশ্বে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন জীবদ্দশায় বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ১৭.৫% মানুষই বন্ধ্যাত্বে ভুগছেন। তবে দেশ বা অঞ্চল ভেদে এই হারের কমবেশি রয়েছে। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে বন্ধ্যাত্বে আক্রান্তের হার ১৭.৫ % আর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ১৬.৫%।এই তারতম্যের যৌক্তিক অনেক কারণ রয়েছে।যেমন: বিশ্বের প্রতিটি স্থানের আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্নতা, ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস, ভিন্ন পরিবেশ ইত্যাদি কিছু কারণে বন্ধ্যাত্বের হার বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম।

ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস এডামস এক বিবৃতিতে বলেন, একটি সত্য ও গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সেটি হচ্ছে, বন্ধ্যাত্ব বৈষম্য করে না। অর্থাৎ ধনী হোক বা গরীব, সর্বত্রই এই সমস্যার হার প্রায় কাছাকাছি।তিনি বলেন, যেহেতু অনেক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাই এর চিকিৎসা আরও বেশি সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও গবেষণার পরিচালক ডা. প্যাস্কেল অ্যালোটি বলেন-‘বন্ধ্যাত্বের জন্য চিকিৎসা নিতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভয়াবহ রকমের খরচের সম্মুখীন হন। এটি একটি প্রধান সমস্যা। আক্রান্তদের জন্য এই রোগের চিকিৎসা খরচ দারিদ্র্যের ফাঁদে পরিণত হয়।’

বন্ধ্যাত্ব সম্বন্ধে সচেতনতা, চিকিৎসার উন্নয়ন, এবং এ চিকিৎসাটি যেন সহজলভ্য ও প্রতিবন্ধকতা বিহীন হয় এ নিয়ে বিশ্বের অনেক সংস্থাই কাজ করছে। দ্বিতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশেও পূর্বের চাইতে বর্তমানে দম্পতিরা বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় আগ্রহী হয়ে উঠছে।

তাই বন্ধ্যাত্ব সমস্যা নিরসনে সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরগুলো যদি সহজ মূল্যে বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ সেবা দিয়ে থাকে তাহলে সমস্যা কাটানো অচিরেই সম্ভব।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা প্রকট। বাংলাদেশে মানুষজন খোলামেলাভাবে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ইতঃস্থ বোধ করে,এই সামাজিক কারণে বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা এতটা প্রকট। আমাদেরকে বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনো বন্ধ্যাত্বের জন্য শুধুমাত্র নারীদের দায়ী করা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে নারী এবং পুরুষ উভয়েরই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থাকতে পারে।

আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা জানার পরেও এটি নিয়ে কোনো রকম আলোচনা করে না। কারণ তারা মনে করে এটি পুরুষত্বের জন্য অপমানজনক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বন্ধ্যাত্ব নিয়ে এরকম আরো অনেক সামাজিক সমস্যা রয়েছে যা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে।