বন্ধ্যাত্ব বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে শুধু শরীরবৃত্তীয় সমস্যা নয় বরং বন্ধ্যাত্ব সমস্যাটি পারিবারিক এবং সামাজিক সমস্যাতে রূপান্তরিত হতে খুব কম সময় নেয়। কারণ শিক্ষিত মানসিকতার অভাব এবং বিশাল গ্রামীণ সমাজের না বোঝার কারণে বন্ধ্যাত্ব সমস্যাটি কিছু সামাজিকতায় এক কেন্দ্রিকভাবে বিচার করা হয়। বেশির ভাগ মানুষ বন্ধ্যাত্ব সমস্যাটিকে মেয়েদের অসুখ হিসেবে ধারণা করে। আসলে পুরুষ ঘঠিত সমস্যাও যে বাচ্চা উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে পুরুষ শাসিত এ সমাজে অর্ধেক মানুষই এটা বিশ্বাস করতে চায় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশের উন্নয়ন হলেও, বন্ধ্যাত্ব নিরসন ও বাচ্চা উৎপাদনের যে চিকিৎসা প্রক্রিয়া, তার কার্যক্রম একটু ধীরগতির। আর ধর্মীয় অনুশাসন, পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা এবং সামাজিক কিছু চাপের কারণে ভুক্তভোগীরা সমাজের সামনে তাদের এই সমস্যা প্রদর্শন করতে লজ্জা পায়। বিগত পাঁচ বছরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১২% থেকে ১৫% পরিবারের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা বিরাজমান। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন এবং বর্তমানে বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব পুরুষ বা মহিলার উর্বরতার হার কমতেও প্রভাব ফেলছে। আসলে বন্ধ্যাত্ব এমন একটি সমস্যা, যা একটা মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে স্বাভাবিক জীবন যাত্রার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ এর সাথে সম্পৃক্ত। তাই বন্ধ্যাত্ব শুধু চিকিৎসা নয় এটা যে একটি শরীরবৃত্তি ও বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান রাখার এবং বংশগতি রক্ষার একমাত্র উপায় সে সম্বন্ধে সচেতনতা এবং যুগোপযোগী পদক্ষেপ গুলো যেন ভুল না হয় এবং সঠিক সময়ে হয়, তার উদ্দেশ্যেই আমাদের মেলার আয়োজন। তাছাড়া বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকে এর চিকিৎসা পদ্ধতি কে অনেক ব্যায় বহুল ও ঝামেলা মনে করেন। কিন্তু তারা জানে না যে এই সমস্যা খুব কম খরচে এবং কম ঝামেলায় এখন নিরসন হচ্ছে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে। বর্তমানে উন্নত পদ্ধতির মাধ্যমে পুরুষ ও মহিলা আলাদা করে পরীক্ষা করে IVF / ICSI এর মত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে পুরুষ ও মহিলার উর্বরতা বৃদ্ধি এবং বাচ্চা উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় সফল হচ্ছে।
আমরা যদি কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করি-
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খ্যাতনামা হাসপাতালের বন্ধ্যাত্ব বিভাগের প্রধান বলেন, বাংলাদেশের বন্ধ্যা রোগীরা বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার নিমিত্তে প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করেন (যার মার্কিন মূল্য মান প্রায় ৯৫০০ মিলিয়ন ডলার)।
আমরা একটু ভেবে দেখি। একটি দম্পতি বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য দেশে অথবা বিদেশে যাতায়াত, থাকা-খাওয়া ও সার্বিক চিকিৎসার খরচ বাবদ আনুমানিক ৮ / ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে। মোট খরচ যদি ১ লক্ষ কোটি টাকার হয় তাহলে একজন দম্পতির খরচ দিয়ে মোট খরচকে ভাগ করলে প্রতিবছরে বন্ধ্যা রোগীর সংখ্যা হয় ১০ লক্ষ।
এবার একটু অন্যভাবে চিন্তা করে দেখি। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যা, আদমশুমারি ২০২২ অনুযায়ী প্রায় ১৭ কোটি। আর গড় আয়ু হল প্রায় ৬৫ বছর। আমরা জেনে থাকবো যে বন্ধ্যাত্বের এই সমস্যাটি সবথেকে বেশি ৩২ থেকে ৪০ বছর বয়সি নারী ও পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। নারীদের ক্ষেত্রে এর আগেও হতে পারে। আমরা যদি এই ১৭ কোটি জনসংখ্যা কে গড় আয়ু ৬৫ দিয়ে ভাগ করি তাহলে প্রতি বয়সের জনসংখ্যা পাব, যা ২৬ লক্ষ এর বেশি। যেহেতু ৩২ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে বন্ধ্যাত্ব বেশি দেখা যায় তাই আট বছরের জনসংখ্যা বের করার জন্য ২৬ লক্ষের সাথে আট গুণ করতে হবে। তাহলে ৩২ থেকে ৪০ বছরের জনসংখ্যা পাওয়া গেল দুই কোটি।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতামত অনুযায়ী জনসংখ্যার ১০ শতাংশ রোগী বন্ধ্যাত্বে ভোগেন। দুই কোটি জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ২০ লক্ষ মানুষ। এই ২০ লক্ষ মানুষকে দম্পতি হিসেবে বিবেচনা করলে ২০ লক্ষ এর অর্ধেক অর্থাৎ ১০ লক্ষ দম্পতি। তাহলে বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্বের রোগী পাওয়া গেল ১০ লক্ষ।
উপরের তথ্যগুলো থেকে জানা গেল বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে, বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভোগেন এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ।
বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বিষদ গবেষণায় দেখা যায় যে শতকরা ১০% রোগী কে ব্যায়বহুল দিকে যেতে হয়। বাকি ৯০% রোগী ডাক্তারদের পরামর্শ, ঔষধ এবং আলোচনার মাধ্যমে তাদের সফলতা অর্জন করে । আমরা চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ্যাত্ব নিরসনে যে সকল পদক্ষেপ ,চিকিৎসা,এবং পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায়, সেগুলো বিদেশী ডাক্তার দের সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশি ডাক্তার দের সয়াহতায় ভুক্তভোগী মানুষদের কে তাদের সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটা রাস্তা তৈরি করতে। আশা করি, বাংলাদেশে এ বন্ধ্যাত্ব নিরসনের একটা নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে।
উক্ত মেলাটি সফল করতে আমরা ইকো এক্সপো আপনার সহযোগিতা ও উপস্থিতি কামনা করছি।