বেশি ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ১০০ জন এর মধ্যে ৯০ জনই দ্বিতীয় ধাপের চিকিৎসার মাধ্যমেই প্রেগনেন্সি বা গর্ভধারণের সফলতা অর্জন করেন। ৯% – ১০% দম্পতিদের ক্ষেত্রে এ্যাডভান্স লেভেলের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় তৃতীয় ধাপ বা শেষ ধাপের চিকিৎসা হয় মূলত তিন ধরনেরঃ
যেমন:
⇒ IUI (Intrauterine Insemination)
⇒ IVF (In Vitro Fertilization)
⇒ ICSI (Intracytoplasmic Sperm Injection)
এখন আমরা এই তিন ধরনের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
IUI কেন করা হয় ?
এই পদ্ধতিতে ভালো স্পার্ম গুলোকে বের করে নিয়ে জরায়ুতে দেয়া হয়। জরায়ুর মুখে ডিম্বাণুগুলো যখন আসে, তখন স্পার্ম গুলোকে তার কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া হয়। জরায়ুর মুখে যে স্টেরাইল / অনুর্বর এনভায়রনমেন্ট থাকে সেটা পার করে স্পার্ম পুশ করা হয় এতে প্রেগনেন্সির সম্ভাবনা সামান্য হলেও বেড়ে যায়। এর সাকসেস রেট ১০% থেকে ১২%।
IUI কখন করা হয় ?
⇒ যখন প্রাথমিক Infertility এর কারন খুঁজে পাওয়া যায় না,
⇒ যখন হাজবেন্ডের স্পার্ম এর মধ্যে অল্প একটু সমস্যা থাকে, অর্থাৎ মিনিমাম ১০ মিলিয়ন এর মত শুক্রাণু থাকতে হবে,
⇒ অর্থাৎ স্পার্ম কাউন্ট ১ কোটির নিচে থাকলে IVF/ ICSI পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে,
⇒ ডিম্বস্ফুটন ঠিকমত না হলে,
⇒ ঔষধ দিয়ে ovulation বা ডিম্ব স্ফুটন করানো হয় এবং তারপর IUI করা হয়,
⇒ দম্পতির মধ্যে মেলামেশা হচ্ছে না বা সহবাস হচ্ছে না সেক্ষেত্রে IUI করা হয়,
⇒ একদম স্পার্ম না থাকলে ডোনার স্পার্ম দিয়ে IUI করা যায়।
IUI এর আগে কি কি পরীক্ষা করতে হয় ?
⇒ বীর্য পরীক্ষা করে দেখা হয়, যে বীর্য কি IUI এর উপযুক্ত কিনা,
⇒ ওভারিয়ান টিউবের টেস্ট করে দেখে নিতে হবে যে,
⇒ টিউবে কোন সমস্যা আছে কিনা। একে টিউবের এটেন্সিক টেস্ট বলা হয় এবং ল্যাপরোস্কপি করে এটা পরীক্ষা করা হয়,
⇒ ট্রান্স ভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ড করে ডিম্বাণুর সংখ্যা কি রকম আছে বা দুটো ওভাল ঠিক আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করা হয়,
⇒ অনিয়মিত পিরিয়ড যাদের তাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড বা প্রলেক্টিং পরীক্ষা করা হয়,
⇒ AMH টেস্ট বা এন্ডোফলিক্যাল কাউন্ট করে দেখে নেয়া হয় ডিমের সংখ্যা কত গুলো আছে,
⇒ ইনফেকশন স্ক্যানিং করা হয় রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে,
⇒ রুবেলা টেস্ট করে দেখা হয় তার অ্যান্টিবডি আছে কিনা? শরীরে না থাকলে ভ্যাকসিন দেয়া হয়,
⇒ থ্যালাসেমিয়া আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
IUI করার আগে কি কি ঠিক আছে কিনা জানতে হবে ?
⇒ অন্তত পক্ষে একটা ফেলোপিয়ান টিউব নরমাল আছে,
⇒ ডিম্বাণুর সংখ্যা নরমাল আছে,
⇒ স্পার্মের সংখ্যা IUI করার জন্য উপযুক্ত আছে কিনা? যদি ১ কোটির বেশি হয় তাহলে খুব ভালো ৫০ লক্ষের বেশি হলেও IUI করা যেতে পারে।
কোন ক্ষেত্রে IUI করা যাবে না ?
⇒ কোন প্রকার পেলভিক ইনফেকশন থাকলে,
⇒ যদি দুটি টিউব ব্লক থাকে,
⇒ সেভার এনডি-মেট্রিওসিস (Tissue similar to the lining of the uterus grows outside the uterus) থাকলে করা যাবে না,
⇒ স্পার্মের সংখ্যা ও গতি যদি খুব কম থাকে।
কি কি ফ্যাক্টর এর উপর সাকসেস রেট নির্ভর করবে ?
⇒ বয়স এবং কত দিন হলো বিয়ে হয়েছে,
⇒ মহিলাদের বয়স যত কম হবে, সাকসেস রেট তত ভাল হবে,
⇒ ৪-৫ বছর যাবত বাচ্চার জন্য চেষ্টা করছেন, এমন ক্ষেত্রে সাকসেস রেট কম হতে পারে।
IUI এর সঠিক প্রস্তুতি ?
⇒ কিভাবে স্পার্ম টা প্রিপেয়ার করা হচ্ছে, সিমেন বা বীর্যের কোয়ালিটি,
⇒ কি কি ঔষধ দেয়া হয়েছে,
⇒ কতবার IUI করা হয়েছে,
⇒ IUI করার পরে ১৫ মিনিটের মত বিশ্রাম পাচ্ছে কিনা?
IUI Steps:
⇒ ঔষধ দেয়া (ট্যাবলেট বা ইনজেকশন ডিম্বাণু তৈরির জন্য),
⇒ আল্ট্রাসাউন্ড করে অভ্যুলেশান এর টাইম বের করে, ঠিক তার আগে IUI করা,
⇒ হাজবেন্ড এর সিমেন সঠিক সময়ে সংগ্রহ করে তা প্রিপেয়ার করা করে রাখা,
⇒ IUI করার পরে আবার ঔষধ প্রদান করা।
কখন IUI করা হবে?
⇒ অভ্যুলেশন এর ঠিক আগে, এতে করে সাকসেস রেট বেশি হয়। (আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে অথবা কিট দিয়ে করতে হয়)
⇒ সিঙ্গেল IUI এর ক্ষেত্রে HCG Injection দেওয়ার ৩৬-৩৮ ঘণ্টা পরে IUI করা হয়।
⇒ ডাবল IUI এর ক্ষেত্রে ইনজেকশন দেওয়ার ২ ঘণ্টা পরে একবার এবং ৪০ ঘন্টা পরে একবার। ডাবল এর ক্ষেত্রে সম্ভাবনা একটু বাড়তে পারে।
কয়টা সাইকেলে IUI করা হয়?
⇒ চার থেকে ছয়টা সাইকেলে IUI করার পরেও যদি প্রেগনেন্সি না আসে, তবে IUI বন্ধ করতে হবে,
⇒ IUI করার পরেও যদি সাকসেস রেট ডেভলপ না করে, গর্ভধারণ না হয় তাহলে IVF/ICSI চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে,
⇒ প্রথম তিন সাইকেলে IUI প্রেগনেন্সি সাকসেস রেট ১৬% – ১৭ %কিন্তু তারপর থেকে প্রতি সাইকেলে ৫% – ৬%।
Ovary/ ডিম্বাশয়কে Stimulate / উদ্দীপক ইনজেকশন দেওয়া হয়,
⇒ ইঞ্জেকশন দেয়ার ফলে ওভারি বা ডিম্বাশয়ের মধ্যে Follicle / বীজ কোষ বাড়তে আরম্ভ করে,
⇒ Follicle বেড়েছে কি বাড়ে নাই সেটা দেখার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। IVF এর প্রসেসে সব কয়টা আল্ট্রাসাউন্ড ট্রান্স ভ্যাজাইনাল বা যোনির মধ্য দিয়ে করা হয়,
⇒ অনেক সময় follicle গুলো বাড়ে না। ৫০% ক্ষেত্রে এমন হয় এবং এমন হলে IVF ক্যানসেল করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে follicle অতিরিক্ত বেশি হয়ে যেতে পারে সেটাও উপযুক্ত নয়।
Step-2 Ovum Pickup (ডিম্বাণু বের করা)
ট্রিগার ইনজেকশন দেওয়ার ছত্রিশ ঘন্টা পরে করা হয় । এই সময় ডাক্তার কিছু নির্দেশনা দিবেন
যেমনঃ
⇒ ওটি তে নেয়ার আগে না খেয়ে আসা, মেকআপ বা ভারী গহনা না পড়ে আসা ইত্যাদি,
⇒ OT-তে স্ত্রী রোগীকে অজ্ঞান করা হয়। ১০-১৫ মিনিটের ট্রিটমেন্ট, তাই পুরোপুরি অজ্ঞান করা হয় না। ইঞ্জেকশন দিয়ে শুধু ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়, যেন কোন ব্যথা না লাগে,
⇒ তারপর একটি যন্ত্রের সাহায্যে যোনি থেকে Egg বা ডিম্বানু একটি টিউবের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়,
⇒ এভাবে যতক্ষণ না সবগুলো ডিম্বাণু বের হচ্ছে ততক্ষণ টিউব ভর্তি করা হয়।
Step-3 ( ডিম বের করে ল্যাবে ফার্টিলাইজ করার পর)
⇒ ডিম্বাণু সংগ্রহের পরে তৃতীয় ও শেষ ধাপ হচ্ছে Embryos / ভ্রুণ ট্রান্সফার। সাধারণত এই অবস্থায় এসে ডক্টর সিদ্ধান্ত নেয় যে IVF নাকি ICSI ট্রিটমেন্ট করা হবে,
⇒ এরপর বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে যোনির মধ্যে ভ্রুণ প্রবেশ করানো হয় এবং আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে পুরো পদ্ধতি টা পর্যবেক্ষণ করা হয় যে, ভ্রুণগুলো কে ঠিক ঠাক জায়গায় রাখা হচ্ছে কিনা।
IVF Lab
⇒ টেস্টটিউবে যে ভ্রুণ গুলো নেওয়া হয়, আইভিএফ ল্যাবে নিয়ে গিয়ে সেগুলো অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে ডিম্বানু গুলোকে যাচাই করে আলাদা করে বেছে নেয়া হয়,
⇒ আলাদা করা ডিম্বাণুগুলোকে শুক্রানুর সাথে মিশিয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে Incubator-এ নিষিক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। এবং প্রতিদিন অবজারভেশনে রাখা হয় যে ভ্রুণ গুলো কি রকম বৃদ্ধি হচ্ছে, Embryo এর বৃদ্ধি যদি ভালো না হয়, তাহলে বাতিল করা লাগে।
IVF এর ক্ষেত্রে সাধারণত সফলতার হার ৩৫ বছরের নিচে ৫৫.৬% (The Society for Reproductive Technology, SART, USA)Within the treatment of IVF, the success rate starts from 45% and ends with 55% on average.
ICSI (Intracytoplasmic Sperm Injection)
ICSI (ইকসি) পদ্ধতিকে IVF এর পরবর্তী ধাপ বলা যেতে পারে। ICSI তে আলাদা একটি যন্ত্রের সাহায্যে একটা একটা করে শুক্রাণু বেছে ডিম্বাণুর সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়। এবং মনিটরের মাধ্যমে দেখা হয় যে কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা।
ICSI কখন করা হয় ?
⇒ শুক্রানুর সংখ্যা খুব কম থাকলে।
⇒ শুক্রানুর গতিশীলতা খুব কম থাকলে।
⇒ শুক্রানুর স্বাস্থ্য ভালো নয় এমন হলে।
⇒ আগে বেশ কয়েক বার IVF হয়েছে কিন্তু সফলতা আসেনি বা এসেও বার বার নষ্ট হয়ে গিয়েছে, ওই ক্ষেত্রেও ICSI করা হয়।
⇒ যদি এমন হয় যে আগেও IVF করা হয়েছিল কিন্তু কোন ডিম্বানু ফার্টিলাইজ করেনি যাকে ফেইল ফার্টিলাইজেশন বলা হয় সে ক্ষেত্রেও IVF এর বদলে ICSI করা হয়।
⇒ যখন অনুর্বরতার কোন কারণ পাওয়া যায় না তখন ICSI করা হয়।
তাহলে কি IVF নাকরে ICSI করা ভালো ?
⇒ উত্তর হচ্ছে না, ICSI ফার্টিলাইজেশন এর চান্স হয়তো বেশি, কিন্তু যে ভ্রুন তৈরি হবে সেটা IVF-এ যা হবে ICSI তে ও তাই হবে।
⇒ সুতরাং যদি কোন মেডিকেল ইন্ডিকেশন থাকে তাহলে ICSI করা যেতে পারে ।
⇒ প্রথম ICSI করা হয়েছে ১৯৯১ সালে ।
⇒ Hypospadias (অধ: মুত্ররন্ধতা) হলে ICSI করা হয়।
⇒ ক্রোমোজোমের মধ্যে (বংশগত) কোন প্রবলেম থাকলে এটা যদি বাচ্চার মধ্যে আসার সম্ভাবনা থাকে সেটা সমাধান করার জন্য ICSI করা যায়।