বন্ধ্যাত্ব একটি শারীরিক সমস্যা হলেও, পুরুষ বা মহিলারজন্য এর প্রভাব সামাজিকভাবে সুদূরপ্রসারী। বন্ধাত্বে জর্জরিত নারী বা পুরুষকে, অথবাওই পরিবারকে সমাজে একটু অন্য চোখে দেখা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বন্ধ্যাত্বের চল্লিশ শতাংশক্ষেত্রে নারী, চল্লিশ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ এবং বিশ শতাংশ ক্ষেত্রে উভয়ের সমস্যাথাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্ব সমস্যার জন্য সমাজ সাধারণত নারীদের দিকে আঙ্গুলতুলে থাকে।
(WHO) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার, মতে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪৮ মিলিয়ন দম্পতি বন্ধ্যাত্ব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রতি৬ জন দম্পতির মধ্যে একজন এ সমস্যায় আক্রান্ত, দুঃখের বিষয় আক্রান্তদের মধ্যে এক শতাংশএরকম মানুষ এই চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেয়। বন্ধ্যাত্বের ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে, BSMMU এর গাইনি বিভাগের অধ্যাপক বিশেষ উদ্বেগ জানান। তবে তিনি এটি বলেন, এই চিকিৎসায়আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বয়স ও শারীরিক জটিলতার দিক বিবেচনা করে এর চিকিৎসা করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজিবিভাগের অধ্যাপক বলেন, দিন দিন বন্ধ্যাত্বের জন্য পুরুষ দায়ী এমন রোগী বাড়ছে। জন্মগতও জেনেটিক কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।বাংলাদেশের বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে এই সেক্টরের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার সেমিনার, প্রোগ্রাম এবং কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবলেন, বন্ধ্যাত্ব রোগের চিকিৎসা নিয়ে তারা কাজ করছেন, এবং এ রোগের চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবে।
“বন্ধ্যাত্ব নিয়ে জটিলতা” শীর্ষক একটি গবেষণায় সম্পৃক্তঅধ্যাপক জানান দেশে বন্ধ্যাত্ব বেড়েই চলছে, আমাদের এই গবেষণায় বন্ধ্যাত্ব বাড়ারপ্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে খাদ্যে ভেজাল, জীবনযাত্রার মান জটিল হওয়া, শব্দ দূষণও জলবায়ু পরিবর্তন কে।
বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় সময় একটি বিবেচ্য বিষয়। একটিফার্টিলিটি সেন্টার এর, ইনফার্টিলিটি বিভাগীয় প্রধান বলেন, অনেকেই দেখা যায় যে আমারকাছে যখন আসে তখন হয়তো ১০-১১ বছর হয়ে গেছে কিন্তু ভালো চিকিৎসা গ্রহণ করে নাই।
জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপকবলছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে পুরুষরা বন্ধ্যত্বের সমস্যা নিয়ে অনেক দেরিতে চিকিৎসকেরকাছে যান।
সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতির দেহ থেকে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুসংগ্রহ করে কৃত্রিম পরিবেশে তা নিষিক্ত করে পুনরায় স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করা বাটেস্টটিউব বেবির ব্যবস্থা শুরু হয়েছে প্রায় তিরিশ বছর আগে।
তবে বাংলাদেশে সন্তানহীনতার চিকিৎসা যতটুকু রয়েছে তারবেশিরভাগেই নারীদের জন্য এবং তা মূলত বিভাগীয় শহর ভিত্তিক।
একটি স্বনামধন্য আইভিএফ অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টারেরকনসালট্যান্ট ও ক্লিনিক্যাল এমব্রায়োলজিস্ট বলেন,আমরা যখন আইভিএফ করি তখন রোগীর পরিস্থিতিঅনুযায়ী আমরা তাদের ট্রিটমেন্ট দিই। সাধারণ মানুষকে আমরা বলি যে, আমরা ১১ থেকে ১৫ দিনেরএকটা ট্রিটমেন্ট দেব। তখন তাদের ঘন ঘন আমাদের কাছে আসতে হবে। আমাদের মধ্যে একটা ভুলধারণা আছে যে, এটা টেস্টটিউবের ভেতরে হচ্ছে, ব্যাপারটা একেবারেই সে রকম না। আমরা ইনকিউবেটরে ভ্রূণটাতৈরি করি, এবং তার তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে ভ্রূণটা মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করেদিই।
তিনি আরও উল্লেখ করেন আইভিএফ একটা ব্যয়বহুল পদ্ধতি। আমাদেরআর্থসামাজিক যে অবস্থা সবার পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না। এটাই প্রথম ও প্রধান সমস্যা। এইপদ্ধতি তে অনেক ধরনের ওষুধ দিতে হয় ও টেস্ট করাতে হয়। যা প্রায় ১৫/২০ দিনের একটা প্রসেস।এ ক্ষেত্রে খরচ প্রায় ২.৫/৩ লাখ এর মত হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে এর খরচ টা আরও বেশি। এ ক্ষেত্রে প্রেগ্নেন্সিরসাফল্যর হার একটা বড় বিবেচ্য বিষয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে গর্ভধারণ করে বন্ধ্যাত্বের মতো রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।